গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে কি হয়? প্রভাব এবং করণীয়

গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার শরীরে অনেক পরিবর্তন আসে, যা মা এবং শিশুর জন্য পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি করে। তবে সকালের অসুস্থতা, ক্ষুধার অভাব, অথবা ব্যস্ত সময়সূচীর কারণে অনেক সময় গর্ভবতী মহিলারা দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকেন। গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে কি হয় তা জানা গুরুত্বপূর্ণ।

খালি পেটে থাকার সাধারণ লক্ষণ

১. বমি বমি ভাব এবং সকালের অসুস্থতা

প্রথম ত্রৈমাসিকে অনেক গর্ভবতী মহিলা সকালের অসুস্থতা অনুভব করেন, যা বমি বমি ভাব এবং বমির মাধ্যমে চিহ্নিত হয়। খালি পেটে থাকা এই লক্ষণগুলোকে আরও তীব্র করতে পারে। খাবার না খাওয়া পাকস্থলীর অ্যাসিড বাড়িয়ে দেয়, যা অস্বস্তি বাড়ায়।

কী করবেন: পেট ফাঁকা না রেখে হালকা খাবার খাওয়া, যেমন বিস্কুট বা টোস্ট, সকালের অসুস্থতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

২. রক্তে শর্করা হ্রাস

খালি পেটে থাকলে গর্ভবতী মহিলাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়, যা ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, বিরক্তি এবং মাথাব্যথা তৈরি করতে পারে।

কী করবেন: রক্তে শর্করার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ছোট ছোট পরিমাণে এবং ঘন ঘন পুষ্টিকর খাবার খান, যেমন ফল, বাদাম, এবং শস্যজাতীয় খাবার।

৩. মেজাজ এবং হরমোনের পরিবর্তন

গর্ভাবস্থার হরমোন পরিবর্তন মেজাজ এবং শক্তির স্তরকে প্রভাবিত করে। খালি পেটে থাকা হরমোনের ওঠানামা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং মেজাজের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

কী করবেন: নিয়মিত খাবার খেলে এবং প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে হরমোনের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

গর্ভাবস্থায় খালি পেটের প্রভাব

শিশুর বিকাশের জন্য মায়ের পুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘন ঘন খালি পেটে থাকলে শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি কমতে পারে, যা তার বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে। ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য ভিটামিনের অভাবে শিশুর সঠিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

কিটোসিস ঝুঁকি

দীর্ঘ সময় না খেলে শরীর চর্বি থেকে শক্তি নেয়, যা কেটোন উৎপন্ন করে। এই কেটোন প্লাসেন্টা অতিক্রম করে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।

হজমের সমস্যা এবং অম্বল

গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এবং পেটের আকার বৃদ্ধির জন্য অনেক মহিলাই অম্বলের সমস্যায় ভোগেন। খালি পেটে থাকার ফলে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে আসে, যা অম্বলের ঝুঁকি বাড়ায়।

কী করবেন: নিয়মিত ছোট খাবার খেলে পেট কিছুটা ভরা থাকে, ফলে অ্যাসিড উৎপাদন কমে এবং অম্বল কমে আসে।

ক্লান্তি এবং শক্তির অভাব

গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি একটি স্বাভাবিক উপসর্গ। খালি পেটে থাকলে শক্তির মাত্রা আরও কমে যায়, যা দৈনন্দিন কার্যক্রমে সমস্যা তৈরি করে।

কী করবেন: ছোট, সুষম খাবার খেলে শক্তির মাত্রা বজায় রাখা সম্ভব।

গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকা এড়াতে করণীয়

  1. নিয়মিত খান: প্রতি ২-৩ ঘণ্টায় ছোট, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  2. পুষ্টিকর খাবার নির্বাচন করুন: প্রোটিন, ফাইবার, এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাবার যেমন বাদাম, দই, ফল, এবং শস্য গ্রহণ করুন।
  3. পানিশূন্যতা এড়ান: পর্যাপ্ত পানি পান করুন। অনেক সময় তৃষ্ণাকে ক্ষুধা বলে ভুল হতে পারে, তাই হাইড্রেটেড থাকা জরুরি।

উপসংহার

গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকা মা এবং শিশুর উভয়ের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। পুষ্টিকর খাবারের উপর গুরুত্ব দিয়ে নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে মা এবং শিশুর সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করা সম্ভব। গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে কি হয় বুঝুন এবং গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যার জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পরামর্শ নিন।

Related Articles:

আমাদের দেওয়া সমস্ত তথ্য পেতে ও আমাদের সাথে যুক্ত হতে নিচের লিঙ্ক এ করুন