রাসেল ভাইপার সাপ: বিস্তার, বিপদ এবং প্রতিকার

রাসেল ভাইপার সাপ

রাসেল ভাইপার সাপ বিশ্বের অন্যতম বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক সাপগুলোর মধ্যে একটি। এটি “Russell’s Viper” নামেও পরিচিত এবং বিজ্ঞানসম্মত নাম Daboia russelii। এটির বিষের প্রভাব এবং আচরণের কারণে এটি সাপ গবেষকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝেও ব্যাপক কৌতূহলের বিষয়। এই ব্লগে আমরা রাসেল ভাইপার সাপ কী, রাসেল ভাইপার কামড়ালে কী হয়, এর ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য এবং কোন দেশে এটির দেখা মেলে, তা নিয়ে আলোচনা করব।

রাসেল ভাইপার সাপ কি?

রাসেল ভাইপার সাপ হল একটি বিষাক্ত সাপ যা মূলত এশিয়া অঞ্চলে পাওয়া যায়। এটি সাপের ‘Viperidae’ পরিবারভুক্ত এবং এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর দ্রুতগতির কামড় এবং শক্তিশালী বিষ। রাসেল ভাইপার সাপের শরীরে বাদামী বা ধূসর পটভূমির উপর বড় বড় গাঢ় বৃত্ত থাকে যা এটিকে সহজেই চেনার সুযোগ করে দেয়।

রাসেল ভাইপার সাপের ইতিহাস

রাসেল ভাইপার সাপের নামকরণ করা হয়েছে স্কটিশ প্রকৃতিবিদ প্যাট্রিক রাসেলের নামানুসারে, যিনি ভারতীয় উপমহাদেশে এই সাপ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। রাসেল ভাইপার সাপের বিষ এবং তার প্রভাব সম্পর্কে গবেষণার জন্য প্যাট্রিক রাসেলকে “ফাদার অফ ইন্ডিয়ান অয়াফিডিয়োলজি” বলা হয়। প্রাচীন কাল থেকেই এই সাপ ভারতীয় উপমহাদেশ, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পরিচিত।

রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয়?

রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে। এর বিষে প্রধানত হিমোটক্সিক প্রভাব দেখা যায়, যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। রাসেল ভাইপার কামড়ানোর কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. তীব্র ব্যথা: কামড়ানোর জায়গায় তীব্র ব্যথা শুরু হয়।
  2. রক্তক্ষরণ: রক্তপাত বন্ধ না হওয়া বা দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ।
  3. অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল: বিষের প্রভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হওয়া, যেমন কিডনি ফেইলিউর।
  4. মৃত্যু: প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে কামড়ানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হতে পারে।

তবে, রাসেল ভাইপার কামড়ানোর পর অ্যান্টিভেনম সঠিকভাবে এবং সময়মতো দেওয়া হলে প্রাণ রক্ষা সম্ভব।

রাসেল ভাইপার সাপের বৈশিষ্ট্য

রাসেল ভাইপার সাপের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো:

  1. শারীরিক গঠন: এই সাপ গড়ে ১-১.৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। এর শরীর পুরু এবং তীক্ষ্ণ মাথা থাকে।
  2. রঙ এবং প্যাটার্ন: বাদামী, ধূসর বা হলুদ রঙের উপর গাঢ় রঙের বৃত্তের প্যাটার্ন রয়েছে।
  3. বিষ: এর বিষে হিমোটক্সিক উপাদান থাকে, যা রক্ত এবং দেহের কোষের উপর প্রভাব ফেলে।
  4. বাসস্থান: প্রধানত শুষ্ক এবং আধা-শুষ্ক অঞ্চলে বসবাস করে। তবে এটি কৃষি জমি, বনের প্রান্ত এবং গ্রামীণ এলাকায়ও দেখা যায়।

রাসেল ভাইপার সাপ কোন দেশের?

রাসেল ভাইপার সাপ প্রধানত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। এর মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ায় এটির দেখা মেলে। বাংলাদেশে প্রধানত খুলনা, রাজশাহী এবং বরিশাল অঞ্চলে রাসেল ভাইপার সাপের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

রাসেল ভাইপার সাপের বিস্তারিত

  1. আচরণ: রাসেল ভাইপার সাধারণত রাত্রিকালীন এবং একাকী জীবনযাপন করে। তবে এটি বিপদের মুখে পড়লে দ্রুত এবং আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।
  2. প্রজনন: রাসেল ভাইপার সাপ ডিম পাড়ে না; এটি জীবন্ত বাচ্চা প্রসব করে। একবারে প্রায় ২০-৬০টি বাচ্চা জন্ম দেয়।
  3. খাদ্য: এটি প্রধানত ইঁদুর, পাখি এবং ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করে।
  4. ঝুঁকি: রাসেল ভাইপার সাপের বিষ মানুষের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এটি মানুষের বসতির কাছাকাছি আসলে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

রাসেল ভাইপার সাপ থেকে বাঁচার উপায়

  1. সতর্কতা: রাসেল ভাইপার সাপের বসবাসযোগ্য এলাকায় চলাচলের সময় সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।
  2. আলো ব্যবহার: রাতে টর্চলাইট ব্যবহার করা জরুরি।
  3. সুরক্ষা সরঞ্জাম: কৃষিকাজ বা গাছে উঠার সময় মোটা জুতা এবং দস্তানা ব্যবহার করা উচিত।
  4. সাপ ধরার দল: রাসেল ভাইপার দেখতে পেলে স্থানীয় সাপ ধরার দলের সাহায্য নেওয়া উচিত।

উপসংহার

রাসেল ভাইপার সাপ প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও এর বিষাক্ত প্রভাবের কারণে এটি মানবজীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান এবং সচেতনতা থাকলে এর ঝুঁকি অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব। রাসেল ভাইপার সাপের ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য এবং কামড়ানোর পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোই আমাদের লক্ষ্য।

photo source- freepik.com

আরও দেখুন ⇓⇓⇓

আরও গুরত্তপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের সাথে যুক্ত হন