গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে কি হয়

গর্ভাবস্থা একজন মহিলার শরীরে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসে, যা মা এবং শিশু উভয়ের জন্য পুষ্টিকে অগ্রাধিকার দেয়। যাইহোক, সকালের অসুস্থতা, ব্যস্ত সময়সূচী বা ক্ষুধার অভাবের মতো কারণগুলির কারণে, গর্ভবতী মহিলাদের দীর্ঘ সময় ধরে খাবার না খেয়ে থাকা অস্বাভাবিক নয়। গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে কি হয় এবং এটি মা ও ভ্রূণ উভয়ের স্বাস্থ্যকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে কি হয় জানুন

  • বমি বমি ভাব এবং সকালের অসুস্থতা
  • ব্লাড সুগার লেভেল কম
  • মেজাজের পরিবর্তন এবং হরমোনের পরিবর্তন
  • শিশুর বিকাশের উপর প্রভাব
  • অম্বল এবং হজমের সমস্যা
  • ক্লান্তি এবং শক্তির মাত্রা হ্রাস

বমি বমি ভাব এবং সকালের অসুস্থতা

অনেক গর্ভবতী মহিলা সকালের অসুস্থতা অনুভব করেন, বিশেষ করে প্রথম ত্রৈমাসিকে বমি বমি ভাব এবং বমি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। খালি পেট এই লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।

খাবার হজম না হলে পাকস্থলীর অ্যাসিড বমি বমি ভাবকে তীব্র করে তুলতে পারে। হালকা হালকা করে খেয়ে পেটকে কাজ করার মাদ্ধমে বমি বমি ভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে।

ব্লাড সুগার লেভেল কম

গর্ভবতী মহিলাদের কম রক্তে শর্করার সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি বেশি, বিশেষ করে যদি তারা কিছুক্ষণ না খেয়ে থাকে।  এর ফলে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা এবং বিরক্তির কারণ হতে পারে। স্থিতিশীল রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মেজাজের পরিবর্তন এবং হরমোনের পরিবর্তন

গর্ভাবস্থার হরমোনগুলি মেজাজ এবং শক্তির স্তরের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। একটি খালি পেট এই ওঠানামাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা বিরক্তি এবং মেজাজের পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করে।

যখন রক্তে শর্করা কমে যায়, শরীর কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে, যা উদ্বেগ এবং চাপের অনুভূতিতে অবদান রাখতে পারে। নিয়মিত সুষম খাবার খাওয়া হরমোনের মাত্রা স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে, উন্নত মানসিক স্বাস্থ্যের প্রচার করে।

শিশুর বিকাশের উপর প্রভাব

শিশুটি বেড়ে ওঠার জন্য মায়ের পুষ্টির উপর নির্ভর করে। যদি একজন গর্ভবতী মহিলার ঘন ঘন খালি পেট থাকে তবে এটি প্রয়োজনীয় পুষ্টির অপর্যাপ্ত থাকতে পারে। এটি শিশুর বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে যদি ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির অভাব হয়।

দীর্ঘায়িত উপবাসের ফলে কিটোসিস হতে পারে, যেখানে শরীর শক্তির জন্য চর্বি ব্যবহার করে, কেটোন তৈরি করে যা প্লাসেন্টা অতিক্রম করতে পারে এবং সম্ভাব্যভাবে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে।

অম্বল এবং হজমের সমস্যা

গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান জরায়ু পেটের চাপের কারণে অম্বল এবং বদহজম সাধারণ ঘটনা। একটি খালি পেট কখনও কখনও এই লক্ষণগুলিকে বাড়িয়ে দেয় বা খারাপ করতে পারে, কারণ পেটের অ্যাসিডগুলি খাদ্যনালীতে উঠতে পারে, অস্বস্তির কারণ হতে পারে।

ছোট, আরও ঘন ঘন খাওয়া পেটকে কিছুটা ভরা রাখতে এবং অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে সাহায্য করতে পারে।

ক্লান্তি এবং শক্তির মাত্রা হ্রাস

গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি একটি সাধারণ উপসর্গ এবং খাবার এড়িয়ে গেলে এটি আরও খারাপ হতে পারে। শিশুকে সমর্থন করার জন্য শরীরের আরও শক্তির প্রয়োজন এবং নিয়মিত খাবার না খেলে একজন গর্ভবতী মহিলা আরও ক্লান্ত এবং অলস বোধ করতে পারেন।

এই শক্তির অভাব দৈনন্দিন কার্যক্রমকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে এবং সামগ্রিক সুস্থতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

আরও পড়ুন ⇓⇓

গর্ভাবস্থায় ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের টিপস

  • নিয়মিত খান: তিনটি বড় খাবারের পরিবর্তে, আপনার পেটকে সন্তুষ্ট রাখতে এবং শক্তির মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে প্রতি কয়েক ঘণ্টায় ছোট, সুষম খাবারের  লক্ষ্য রাখুন।
  • পুষ্টি-সমৃদ্ধ খাবার বেছে নিন: দীর্ঘস্থায়ী শক্তি জোগাতে প্রোটিন, ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন বাদাম, দই, ফল এবং গোটা শস্যযুক্ত খাবার বেছে নিন।
  • হাইড্রেটেড থাকুন: কখনও কখনও, তৃষ্ণাকে ক্ষুধা বলে ভুল করা যেতে পারে। সারা দিন জল পান করা হাইড্রেশন বজায় রাখতে এবং খালি পেটে অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে

উপসংহার

গর্ভাবস্থায় খাবার ছাড়া মা এবং শিশু উভয়ের জন্য বিভিন্ন অস্বস্তি এবং সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। আপনার স্বাস্থ্য এবং আপনার শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের উপর গুরত্ত রেখে নিয়মিত খাওয়ার সময়সূচী বজায় রাখা অপরিহার্য।

আপনি এবং আপনার শিশু উভয়ের জন্য সর্বোত্তম ফলাফল নিশ্চিত করতে গর্ভাবস্থায় ব্যক্তিগত পরামর্শের জন্য সর্বদা একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করুন। আশাকরি গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে কি হয় জেনেছেন।

আরও পড়ুন

আরও স্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্তপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের সাথে  যুক্ত হন 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *