বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে ব্রণ এখন একটি অত্যন্ত সাধারণ ত্বকের সমস্যা। তবে তৈলাক্ত ত্বকে এই সমস্যা আরও বেশি জটিল হয়ে ওঠে, কারণ অতিরিক্ত সিবাম (তেল) ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে দিয়ে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। এতে গালের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় ঘনঘন ব্রণ দেখা দেয়। তবে চিন্তার কিছু নেই—বিজ্ঞানসম্মত যত্ন আর কিছু জীবনধারাগত পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
এখানে তৈলাক্ত ত্বকে গালের ব্রণ দূর করার ১০টি প্রমাণিত ও কার্যকর উপায় দেওয়া হলো:
নিয়মিত ও উপযুক্ত স্কিনকেয়ার রুটিন গড়ে তুলুন
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য প্রতিদিন সকাল ও রাতে একটি মাইল্ড, তেলমুক্ত ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া জরুরি। ফোমিং ক্লিনজার বা স্যালিসিলিক অ্যাসিডযুক্ত ক্লিনজার খুব কার্যকর। ফেস ধোয়ার পর হালকা, non-comedogenic (ছিদ্র বন্ধ না করে এমন) ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
স্যালিসিলিক অ্যাসিড ও বেনজয়েল পারক্সাইড ব্যবহার করুন
- স্যালিসিলিক অ্যাসিড ত্বকের মৃত কোষ অপসারণ করে ছিদ্র খোলা রাখতে সাহায্য করে।
- বেনজয়েল পারক্সাইড ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে এবং প্রদাহ কমায়।
আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী দিনে একবার বা দুইবার ব্যবহার করতে পারেন, তবে বেশি ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে হবে।
নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করুন, তবে অতিরিক্ত নয়
প্রতি সপ্তাহে ২-৩ বার এক্সফোলিয়েশন করলেই যথেষ্ট। এতে মৃত কোষ দূর হয় এবং ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কমে। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড বা এনজাইম বেসড এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহার করুন, স্ক্রাব জাতীয় জিনিস এড়িয়ে চলুন।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ চিনি ও দুগ্ধজাত খাবার ব্রণ বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই চিপস, চকোলেট, সফট ড্রিংক এড়িয়ে চলুন এবং ফল, সবজি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: বাদাম, মাছ) বেশি খান।
প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
চাপ বেশি থাকলে কর্টিসল হরমোন বেড়ে যায়, যা সিবাম উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিনের জীবনে ধ্যান, যোগব্যায়াম, কিংবা সময়মতো ঘুমের মাধ্যমে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
সঠিক মেকআপ ব্যবহার করুন
তৈলাক্ত ত্বকে মেকআপ ব্যবহার করলে অবশ্যই “non-comedogenic”, oil-free ও mineral-based মেকআপ বেছে নিতে হবে।
রাতের ঘুমের আগে সবসময় মেকআপ ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন।
মুখে হাত দেওয়া এড়িয়ে চলুন
সারাদিনে কতবার মুখে হাত দিচ্ছেন খেয়াল করুন। ফোনের স্ক্রিন, চশমার ফ্রেম বা হেলমেটের স্ট্র্যাপ—এসব থেকেও ব্যাকটেরিয়া ত্বকে ছড়াতে পারে। তাই হাত ধুয়ে নিন, এবং মুখ স্পর্শ করা কমান।
তেল-শোষণকারী ব্লটিং পেপার ব্যবহার করুন
যারা বাইরে কাজ করেন বা দিনে অনেক ঘামেন, তারা ব্লটিং পেপার ব্যবহার করে অতিরিক্ত তেল শোষণ করতে পারেন। এটি মেকআপ নষ্ট না করে ত্বককে তুলনামূলকভাবে ফ্রেশ রাখতে সাহায্য করে।
চুল পরিষ্কার রাখুন এবং হেয়ার প্রোডাক্টে সচেতনতা
চুলে ব্যবহৃত তেল বা হেয়ার সিরাম গালের ত্বকে লেগে ব্রণ তৈরি করতে পারে। তাই চুল পরিষ্কার রাখুন এবং এমন প্রোডাক্ট বেছে নিন যাতে সিলিকন বা হেভি অয়েল না থাকে।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
যদি এই ঘরোয়া যত্নেও ব্রণ না কমে বা বারবার ফিরে আসে, তাহলে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন। বর্তমানে বেশ কিছু কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে যেমন:
- টপিক্যাল রেটিনয়েডস
- অ্যান্টিবায়োটিক জেল বা ওষুধ
- হারমোনাল থেরাপি (বিশেষত নারীদের জন্য)
- কেমিক্যাল পিল বা লেজার থেরাপি
উপসংহার
তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করা একদিনে সম্ভব নয়, তবে ধারাবাহিক পরিচর্যা, সঠিক পণ্য ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস আপনাকে পরিস্কার ও উজ্জ্বল ত্বকের পথে এগিয়ে দেবে। সবচেয়ে বড় কথা, ধৈর্য ও নিয়ম মেনে চলা—এটাই ত্বকের সমস্যার সবচেয়ে বড় সমাধান।
আরও পড়ুন
- গরমে কোন ফেসওয়াস ভালো | ১০ সেরা ফেসওয়াস
- মেয়েদের জন্য কোন ফেসওয়াশ সবচেয়ে ভালো
- চোখের নিচে কালো দাগ কিভাবে দূর করা যায়
- মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়
- আলু দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
- অ্যালোভেরা মুখে মাখলে কি হয় – উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- চুল লম্বা করার উপায়
- মেহেদি ডিজাইন – ১০০ টি নতুন মেহেদি ডিজাইন
- গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে
- গর্ভাবস্থায় পেটে লম্বা দাগ
- হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার লক্ষণ ও হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়